আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও শ্রমিক আন্দোলনের আশঙ্কা এই স্বস্তি বিঘ্নিত করতে পারে। সম্প্রতি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, বোনাস ও অন্য সুবিধা সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করতে দেখা গেছে।
এরমধ্যে গতকাল বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এদিন বেলা ১১টার দিকে কোনাবাড়ী উড়ালসড়কের পাশে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির কারণে মহাসড়কটিতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তারা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
পুলিশ ও কারখানাটির কয়েকজন শ্রমিকের সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়, গত মাসের বেতন চলতি মাসের ২০ তারিখে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ২৭ মার্চ তাঁদের বোনাস দেওয়া হবে। কিন্তু চলতি মাসের বেতন কবে দেওয়া হবে, তা সিদ্ধান্ত হয়নি। গত বুধবার শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষের কাছে সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চান।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল এ ব্যাপারে তথ্য জানানো হবে। সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়ে বিষয়টি আবার জানতে চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় সকাল থেকেই কারখানাটিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অবস্থান নেন। কারখানার শ্রমিক আসাদুল ইসলাম জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ চলতি মাসের বেতন কবে দেবে, সেটি জানতে চাইলে নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। সঠিক কোনো কথা বলছিল না। তাই বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা।
বিক্ষোভের একপর্যায়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এতে প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
এছাড়া গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। পরে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশের হস্তক্ষেপ শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গাজীপুরের ১০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে, শ্রমিক মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুরের মৌচাকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সাড়ে ১০টায় অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীতে ও শ্রমিক মারধরের প্রতিবাদে মৌচাক এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আশপাশের অন্তত ১০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা এলাকায় আনসার ও অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছে।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী এলাকায় রিদিশা স্পিনিং অ্যান্ড ডাইং কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন যে, দীর্ঘদিন ধরে তাদের সরকার নির্ধারিত বেতন প্রদান করা হচ্ছে না। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা মনে করেন শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া না হলে ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিক অসন্তোষ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ঈদযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
কেকে/এআর