নাটোরের লালপুর উপজেলায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে এই পদটি শূন্য থাকায় জমি কেনাবেচা, নামজারি, জমাখারিজ, ভূমি উন্নয়ন করসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমও থমকে গেছে।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি এসিল্যান্ড শিমুল আক্তার বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে একাধিক দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে নিয়মিত ভূমি অফিস করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার জনগণ ভূমি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ভূমি সেবা না পেয়ে ভুক্তভোগী আব্দুল মালেক বলেন, "প্রায় দুই মাস আগে নামজারি জমাখারিজের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। অফিসের কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, কবে নাগাদ এটি সম্পন্ন হবে।" একই সমস্যা ভোগ করছেন মাসুদ রানা, যিনি তিন বছর ধরে জমির মিসকেস সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমি অফিসে ঘুরছেন। মার্চ মাসে তার মিসকেসের শুনানির দিন ধার্য ছিল, কিন্তু এসিল্যান্ড না থাকায় সেটিও হয়নি।
শুধু সাধারণ জনগণই নন, দলিল লেখকরাও ভূমি অফিসের সেবা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন। তারা জানান, গত ডিসেম্বর মাসজুড়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্ভার বন্ধ থাকায় নামজারি কার্যক্রম স্থগিত ছিল। এখন এসিল্যান্ড না থাকায় নতুন করে নামজারি ও জমাখারিজ করতেও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করাও সম্ভব হচ্ছে না। এক দলিল লেখক বলেন, "প্রতিদিন মাধবপুর এলাকায় প্রচুর জমি কেনাবেচা হয়। কিন্তু নামজারি, বাটোয়ারা এবং খাজনা পরিশোধ ছাড়া জমি হস্তান্তর করা যায় না। এসিল্যান্ড না থাকায় এসব কাজ আটকে আছে।"
লালপুর উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলার অধীনে ১১টি সহকারী ভূমি অফিস রয়েছে, যা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসিল্যান্ড না থাকায় এসব অফিসেও ভূমি সংক্রান্ত সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ওয়ালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা উম্মে আফছানা বলেন, "প্রায় এক মাস ধরে এসিল্যান্ড না থাকায় নামজারি ও জমাখারিজের কাজ ধীরগতিতে চলছে। এতে সেবাগ্রহীতারা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না, তাদের বোঝানোও কঠিন হয়ে পড়ছে।"
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, "নতুন এসিল্যান্ড পদায়ন করা হয়েছে, তবে এখনো তিনি যোগদান করেননি। ভূমি অফিসের সেবা কার্যক্রম যাতে সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই নতুন এসিল্যান্ড যোগ দেবেন এবং সেবাপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।"
কেকে/এআর