আগামী ১৭ চৈত্র শুরু হতে যাচ্ছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বেলতলী এলাকার বদরপুর গ্রামে সাত দিনব্যাপী ১০৬তম লেংটার মেলা। আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চক্র মাদক কেনাবেচা, সেবন ও অশ্লীল নৃত্যের আসর বসানোর পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরেই ঘটে থাকে কোন না কোন অপ্রীতিকর ঘটনা।
পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও প্রতি বছর সেখানে প্রকাশ্যে ৫শতাধিক গাঁজার দোকান, আফিমসহ বিভিন্ন মাদকের পসরা সাজিয়ে বিক্রি হতো। সারা দেশ থেকে ছুটে আসেন নেশাখোরেরা। এ ছাড়া মেলার কয়েকটি এলাকায় নারীদের অশ্লীল নৃত্যের জমজমাট আসরও দেখা গিয়েছি বিগত বছরগুলোতে।
জানা যায়, উপজেলার বদরপুর এলাকায় পীর ও সাধক হযরত শাহ সুফি সোলায়মান (রহ.) ওরফে লেংটা বাবা বাংলা ১৩২৫ সালের চৈত্র মাসে এ এলাকায় মারা যান। এরপর প্রতিবছর তাঁর মাজার এলাকায় চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে ওই মাজারের খাদেম, আশেকানরা মেলা ও বার্ষিক ওরশের আয়োজন করেন। স্থানীয়ভাবে মেলাটি লেংটার মেলা নামে পরিচিত। এতে প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজরত শাহ সুফি সোলায়মান (রহ.) ওরফে লেংটার নামে ওরশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিটি। মেলার ওরশকে কেন্দ্র করে মাজার কমিটির খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়াসহ আশপাশের লোকদের কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। পাগল ও নেশাখোররা আস্তানা গেড়ে বসেছে। চলবে চাঁদাবাজি, জুয়া, ছিনতাই, অশ্লীলতা, অবাধে মাদক বিক্রি ও সেবন।
শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে ওই মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেলতলী লঞ্চ ঘাট থেকে সাদুল্ল্যাপুর মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে মেলাটির নানা কার্যক্রমের প্রস্তুতি। দোকানপাট মেরামতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। মাজার এলাকায় বাড়ছে আশেকান-ভক্তের ভীর। মাজারটির পশ্চিম দিকে পুকুরের পাড়ে, পুকুরসংলগ্ন বাগানে ও বেড়িবাঁধ এলাকায় গাঁজা-মদ সেবন ও বিক্রির বসবে জমজমাট হাট।
শরীয়তপুর থেকে আশা নেয়ামত আলী নামে এক আশেকান জানান, আমি প্রতি বছর মেলা শুরু হবার ১মাস আগেই চলে এসেছি, এখানে এসে মনের সুখে সিদ্ধি (গাঁজা) সেবন করতে পারি। আমি লেংটা বাবার ভক্ত। ৪০বছর যাবৎ আমি এখানে আসি। এবারও এসেছি, মেলার পরেও পনেরো দিন থাকব।
উপজেলার তালতলী গ্রামের গাজী এমদাদুল হক মানিক অভিযোগ করেন, লেংটার মেলার নামে এখানে যেভাবে দিন–রাতে মাদক ও অশ্লীল নাচগানের আসর বসবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। মেলা এলাকার শতাধিক স্থানে মাদক কেনাবেচা ও সেবনের জমজমাট আড্ডা চলবে। এতে মেলা ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। নেশাগ্রস্ত ও বিপথগামী হয়ে পড়ছে এলাকার কিশোর-তরুণেরা। নষ্ট হবে সামাজিক পরিবেশ। ওপরে চলবে মেলা আর ভেতরে চলছে লাখ লাখ টাকার মাদকের ব্যবসা। প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি এবার যেন এই মেলাকে কেন্দ্র করে কোন রকমের মাদক, জুয়া, নারী ব্যবসা না হয় সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
সাদুল্ল্যাপুর ইউপি সদস্য শিপলু জানান, করোণাকালীন সময়ে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করেছিল প্রশাসন। তার পরে দুই বছর লেংটার মেলার সময় রোজা ছিল, তখন স্বল্প পরিসরে মেলার কার্যক্রম হয়েছিল। এবার মেলা শুরু হবে ঈদের দিন অথবা ঈদের আগের দিন। তাই অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর লোকজন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করব। এ বছর যাতে মেলায় প্রশাসনের নজরদারি বেশি থাকে।
এ বিষয়ে হজরত শাহ সুফি সোলায়মান (রহ.) ওরফে লেংটার মাজারের খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়া জানান, মাজারের বাউন্ডারির ভিতরের কোন ধরনের খারাপ কাজের জায়গা নেই। এই অপকর্ম গুলো কোথায় হয়, সেই স্থান উল্লেখ্য করে আপনারা সংবাদ লিখেন। আমিও চাই ওরশ মাহফিল কে কেন্দ্র করে যাতে কোন ধরনের খারাপ কাজ না হয়। এগুলো বন্ধের জন্য আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর দরখাস্ত করেছি। মাজার কমপ্লেক্স এরিয়ায় ১৫০জন ভলান্টিয়ার কাজ করবে।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল হক জানান, বদরপুর গ্রামে প্রতি বছরই লেংরার মাজারকে কেন্দ্র করে ওরশ ও মেলা হয়ে থাকে। অনেক লোকজনের ও সমাগম হয়। অন্যান্য বছর কি হয়েছে জানিনা। এ বছর চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা স্পষ্ট। কোথাও আইন-শৃঙ্খলার যেন বিঘ্ন না ঘটে। সে লক্ষেই মতলব উত্তর থানা পুলিশ কাজ করছে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন রকম চাঁদাবাজি, জুয়া, ছিনতাই, অশ্লীলতা, মাদক বিক্রি করতে না পারে, সেই লক্ষে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।
কেকে/এআর