বাংলাদেশে সুলতানি আমলের অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর অন্যতম হবিগঞ্জের উচাইল গ্রামের শংকরপাশা শাহী মসজিদ। জেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে ছয় একর বিস্তৃত ভূমিতে একটি টিলার ওপর এই মসজিদ অবস্থিত। এ শাহী মসজিদটি প্রতিষ্ঠা হয় ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাগরণকালে সুলতানি আমলে। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ মজলিশ আমিন ১৫১৩ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট একটি টিলার উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদটির ১টি বড় ও ৩টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। নানা কারুকাজে সাজানো আছে পুরো দেওয়াল।
হজরত শাহজালাল (রহ.) সিলেট বিজয়ের পর তার যে ১২ জন সহকর্মীকে তরফ অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য পাঠান, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাহ মজলিশ আমিন (রহ.)। পরবর্তী সময়ে মুসলিম বাংলার স্বনামধন্য শাসনকর্তা সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের (১৪৯৩ থেকে ১৫১৯) আমলে এই মসজিদের সুদৃশ্য ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। ইমারতটি দৈর্ঘ্যে ২১ ফুট ছয় ইঞ্চি এবং প্রস্থেও সমান মাপের। বারান্দা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। মূল ভবনের ওপর একটি বড় গম্বুজ এবং বারান্দার ওপর অপেক্ষাকৃত ছোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। দরজা ও জানালার সংখ্যা ১৪টি। জানালাগুলো অনেকটাই দরজা আকৃতির। তিন দিকের দেওয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট। পশ্চিম দিকের দেওয়ালের পুরুত্ব প্রায় দ্বিগুণ। সামনের প্রাচীরের কার্নিশ ও ওপরের ছাদ নির্মিত হয়েছে বাঁকানোভাবে। প্রধান কক্ষের চার কোণে আর বারান্দার দুই কোণে ছয়টি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ রয়েছে।
দেওয়ালের বাহির দিকে ইটের ওপর বিভিন্ন নকশা এবং অলংকরণ, শিলালিপি কালের চক্রে বিনষ্ট হয়ে গেছে। মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে শাহ মজলিশ আমিন (রহ.)-এর মাজার। কালের বিবর্তনে এক সময় মসজিদ সংলগ্ন এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়ে জঙ্গলবেষ্টিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ওই এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠলে জঙ্গলে আবাদ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে শাহ মজলিশ আমিনে মাজার ও মসজিদটি। ফলে স্থানীয়রা মসজিদটিকে শঙ্করপাশা গায়েবি মসজিদ বলে সম্বোধন করে থাকেন।
কেকে/এএম