দিনাজপুরের পার্বতীপুরে নাম সর্বস্ব ইনস্যুরেন্স কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার গ্রাহক। মেয়াদোত্তীর্ণ নীতির টাকা ফেরত না পেয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও টাকা না পাওয়ায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অন্যদিকে, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
দীর্ঘদিন ধরে বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে টাকা প্রদানে গড়িমসি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। পার্বতীপুরে গ্রাহক হয়রানির শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স।
২০১১ সালে পার্বতীপুর শাখায় ফারইস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্স-এ ১০ বছরের মেয়াদী পলিসি নেন উপজেলার হলদীবাড়ী এলাকার কাঠমিস্ত্রি রবিউল ইসলাম। একই শাখায় শেখ শওকত আলী নামে আরেক ব্যক্তি একই বছর আরেকটি পলিসি গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তাদের কাউকেই এখনো টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
একইভাবে, সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক ইয়াকুব আলী অভিযোগ করেছেন, তার পাঁচ বছরের মেয়াদী পলিসি শেষ হওয়ার পরও জমাকৃত টাকা ফেরত না দিয়ে মাত্র ১৬৬ টাকা লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে, যা গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের গ্রাহক শওকত আলী বলেন, পাঁচ বছর হয়ে গেল, এখনো আমার টাকা পাইনি। টাকা চাইতে গেলে নানা অজুহাত দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। আমি প্রশাসনের কাছে এর সঠিক প্রতিকার চাই।
রবিউল ইসলাম বলেন, মিস্ত্রির কাজ করে অনেক কষ্টে কিস্তির টাকা দিয়েছি। মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু টাকা দিচ্ছে না। পাঁচ বছরে শত শত বার অফিসে গিয়েছি, শুধু আশ্বাসই পাই। এমনকি নতুন পলিসি নিলে দ্রুত টাকা পাওয়ার সুযোগ আছে বলেও বলা হয়, যা পুরোপুরি প্রতারণা।
ইয়াকুব আলী জানান, টাকার জন্য অফিসে গেলে ম্যানেজার ফিরোজ সরদার সাজু বলেন, জমিতে ধান লাগিয়ে চলে গেলে কী ফিরে এসে তা পাবেন? তার এমন কথায় আমি হতবাক হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।
একজন জানান, ২০১৯ সালে ৬১,৬৮০ টাকা জমা দিয়ে একটি পলিসি করেছিলাম। মেয়াদ শেষে কোম্পানিটি মাত্র ১৬৩ টাকা লভ্যাংশসহ ৬১,৮৪৩ টাকার চেক দিয়েছে, যা কল্পনাও করিনি।
ভুক্তভোগীদের দাবি, গ্রাহকের টাকা ফেরতের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স পার্বতীপুর অফিসে ম্যানেজার ফিরোজ সরদার সাজুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাজ উদ্দীন বলেন, সব গ্রাহকই তাদের টাকা পাবেন। তবে কবে পাবেন, তা বলতে পারছি না।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খালিদ বিন মনসুর বলেন, গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম