লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, গঙ্গাধর এবং দুধকুমার সহ ২৬টি নদীর ৫২০টি চর এলাকায় ছাগল পালন বৃদ্ধি পেয়েছে। গরু পালনের জন্য পর্যাপ্ত পশুখাদ্যের প্রয়োজন এবং পশুখাদ্যের দাম বেশি থাকায় চরের মানুষ গরু পালনে অনিচ্ছুক। ছাগল পালনের জন্য কৃষকদের কোনও পশুখাদ্য কিনতে হয় না।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, দুই জেলায় ছাগলের সংখ্যা ১২ লক্ষ ১৬ হাজার ৩০০। তন্মধ্যে কুড়িগ্রামে রয়েছে ৭ লক্ষ ১১ হাজার ২০০ এবং লালমনিরহাটে রয়েছে ৫ লক্ষ ৫ হাজার ১০০ ছাগল। চার বছর আগে দুটি জেলায় ৮,২১,৫০০ টি ছাগল ছিল। চর অঞ্চলে বেশি ছাগল উৎপাদদন ও পালন করা হয়।
চর অঞ্চলের চাষীরা জানান, গরু ও ছাগলের সংখ্যার বেশিরভাগ পরিবর্তন ঘটেছে চর অঞ্চলে। ছাগল পালন লাভজনক হওয়ায় চরের মানুষ ছাগল পালনের দিকে ঝুঁকছেন। ছাগল পালনের জন্য তাদের পশুখাদ্য কিনতে হয় না। প্রাকৃতিক ঘাস খাইয়ে চরে ছাগল পালন করা হয়। চর এলাকার প্রতিটি পরিবারের ৮-২০টি ছাগল রয়েছে এবং প্রতি বছর ছাগল বিক্রি করে তারা ১-৩ লক্ষ টাকা আয় করছেন।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত চর মনতোলার কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, পশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে, বিশেষ করে ধানের খড়ের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে চরের কৃষকরা গরু পালনের জন্য পশুখাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এখন তারা ছাগল পালনে খুবই আগ্রহী। ‘আমার ১২টি ছাগল আছে। আমি প্রতি বছর ছাগল বিক্রি করে এক লক্ষ টাকারও বেশি আয় করি,’ তিনি বলেন।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত চর শাখাহাতির কৃষক মোবারক হোসেন (৫০) বলেন, তিন বছর আগে তার চারটি ছাগল ছিল কিন্তু এখন ১৮টি ছাগল আছে। বেশি দামে পশুখাদ্য কিনে গরু পালন করা লাভজনক হচ্ছে না, তবে এখন ছাগল পালন করে তারা লাভবান হচ্ছেন, তিনি বলেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত চর কলমাটির কৃষক আক্কাস আলী (৫৫) বলেন, তিনি দুই বছর আগে ছাগল পালন শুরু করেছিলেন এবং এখন তার ২০টি ছাগল আছে। ছাগল পালনে তাকে কোনও টাকা খরচ করতে হয় না। ‘চরাঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক গরু পালন কমিয়ে দিয়েছেন এবং তারা ছাগলের সংখ্যা বাড়িয়েছেন এবং এতে আমাদের লাভ হচ্ছে,’ তিনি বলেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর হাটের গরু ব্যবসায়ী টুলু মিয়া বলেন, বর্তমানে গরুর তুলনায় চরাঞ্চল থেকে ছাগলের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিটি ছাগল ৮-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এবং চরাঞ্চল থেকে আসা ছাগলের চাহিদা বেশি, তিনি বলেন।
লালমনিরহাট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছাগলের খুব বেশি রোগ হয় না। বছরে একবার পিপিআর টিকা দিলেই ছাগল নিরাপদে পালন করা সম্ভব। ছাগল পালন করে চরের মানুষ আশানুরূপ লাভবান হচ্ছে। প্রাণীসম্পদ বিভাগ উন্নত জাতের ছাগল সরবরাহ করছে কৃষকদের মাঝে এবং ছাগল পালনে সার্বিক সহযোগিতা করছে।’
কেকে/ এমএস