রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫,
২ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
শিরোনাম: রায়ে সন্তুষ্ট, তবে দ্রুত কার্যকরের প্রত্যাশা আবরারের বাবার      ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করতে চায়: সিইসি      সৌদিতে ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা       আবরার হত্যা: ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল      ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা, নিহত ২৪      চার দিনের সফর শেষে ঢাকা ছাড়লেন জাতিসংঘ মহাসচিব      ঈদ ঘিরে সক্রিয় জাল টাকার কারবারিরা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
টাকা ছাড়া মিলে না শয্যা, পদে পদে ভোগান্তি
মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট
প্রকাশ: রোববার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ৯:৩৯ এএম  (ভিজিটর : ১১৫)
ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কম খরচে ভালো চিকিৎসার পেতে গ্রামগঞ্জ থেকে সরল রোগী ও তাদের স্বজনদের পড়েতে হয় বিড়ম্বনায়। হাসাপাতালের ওয়ার্ডবয়কে টাকা দিলে মিলে ভালো আচরণ ও বেড। টাকা নাই তো ভালো আচরণও নাই, বেডও নাই। বেড থাকা সত্ত্বেও রোগীদের থাকতে হয় ফ্লোরে। বিছনার চাদরও বদল হয় না এক সপ্তাহে। 

এ ছাড়াও হাসপাতালে ব্রাদার ও নার্সরা বেড নিয়ে বাণিজ্য করেন। ভর্তি হতে আসা রোগীদের কাছে বেড সংকটের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। বেড খালি থাকলেও তাদের দেওয়া হয় না। পরে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা চকচকে নোট হাতে ধরিয়ে দিলেই তাদের বেড দেওয়া হয়, করা হয় ভালো আচরণ। এখানেই শেষ বেডে থাকতে হলে প্রতিদিন টাকা পরিশোধ করতে হয় রোগীদের স্বজনদের। 

ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয় আরো বিড়ম্বনায়। রোগী বহনের ক্ষেত্রে ট্রলি মিলে না প্রায় সময়। ট্রলি বহনকারী কর্মচারীরা রোগী আনা-নেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে ট্রলি মিলে অন্যথায় রোগীদের স্বজনদের কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হয়। এর বাইরে ওষুধ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রক্ত জোগাড় করতে হলেও রোগীদের স্বজনদের পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ও ওয়ার্ডে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৫০০ শয্যার সুযোগ-সুবিধা আছে। তবে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন সিলেট ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী সেবা নেন। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসাসেবা নেন ৪ হাজারের অধিক রোগী। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ওসমানী হাসপাতালের আউটডোর এর চর্মরোগ বিভাগে গিয়ে দেখা গেল একজন বয়োবৃদ্ধ পুরুষ দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। জানা গেল ভেতরে চিকিৎসকও আছেন। উঁকি দিয়ে দেখা গেল তিনি চেম্বারে বসে খোশগল্প করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, তিনি সুনামগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, আধাঘণ্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ডাক্তারের এটেনডেন্ট বলেছেন স্যার ব্যস্ত, যখন ডাকবেন তখন দেখবেন। এমন চিত্র মেডিসিন বিভাগেও দেখা গেল। জগন্নাথপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব এক নারী শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন। তার স্বজন জানান, একঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। স্যার চেম্বারে নেই। বাহিরে গেছেন। এলে রোগী দেখবেন। হাসপাতালের পুরো বহির্বিভাগেই এমন দুরবস্থা বিরাজমান।

তথ্য বলছে, এ বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন। সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সহজ সরল এই গরিব মানুষগুলো ভোরে রওয়ানা দিয়ে সরকারি চিকিৎসক দেখানোর জন্য শহরে এসে পড়েন নানা ভোগান্তিতে। প্রথমে টিকেটের জন্য তাদের দাঁড়াতে হয় লম্বা লাইনে। এরপর ডাক্তারের কক্ষের সামনে লম্বা লাইন। কোনোভাবে ডাক্তার দেখানো গেলেও ওষুধ নিতে গিয়েও লাইন। একই অবস্থা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের বেলায়ও। চিকিৎসা নিতে এসে যেন পদে পদে রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। 

অভিযোগ রয়েছ, রোগীদের হয়রানি ও টাকা ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কাজ করেন না। অন্যদিকে চিকিৎসকদের গাফিলতি এসব অভিযোগ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখান নানা যুক্তি। আছে জনবল সংকটের দোহাই। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫০০। আর চিকিৎসার ওষুধ ও খাবারের আয়োজন রয়েছে ৯০০ রোগীর। এ কারণে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

অন্যদিকে হাসপাতালের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকদের সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। আর বাকি সময় তারা বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। ফলে তাদের কাছ থেকে সঠিক সেবা পায় না রোগীরা।

সূত্র জানায়, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রোগ নির্ণয়ের সব সরঞ্জাম থাকলেও অধিকাংশ সময় সেগুলো অকেজো বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। রোগীদের কৌশলে নিজেদের প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে যায় দাললেরা। কখনো কখনো ডাক্তার ও নার্সরা তাদের নির্ধারিত প্যাথলজি সেন্টারে রোগীদের পাঠিয়ে দেন। আর গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হলেই দেওয়া হয় একাধিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলো আবার হাসপাতালে করা হয় না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে রক্ত সিন্ডিকেট এখন আরো তৎপর। রক্তের মজুদ থাকলেও রক্ত না বলে জানানো হয় প্রায়ই। ফলে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত নিয়ে আসেন রোগীর স্বজনরা। বেশিরভাগ রোগীর বেলায় রক্ত না ব্যবহার হলেও এসব রক্ত চোরাই পথে আবার নিয়ে যাওয়া হয় ওইসব প্যাথলজি সেন্টারে। 

হাসপাতালের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অপারেশন থিয়েটার ও ওষুধ নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। রোগীর সার্জারি সরঞ্জামাদি দ্বিগুণ লিখে দেয়া হচ্ছে। কখনো কখনো দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে রোগীর স্বজনরা এক হাজার টাকার সরঞ্জাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। বাইরে থেকে ওষুধ আনার জন্য শতাধিক দালালের সমন্বয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের ভেতরে পুলিশের সহায়তায় দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এ ছাড়াও হাসপাতালের বাইরে থাকা ফার্মেসিগুলোর নিয়োজিত দালালদের দৌরাত্ম্য কমছে না। বরং দিন দিন আরো বাড়ছে। হাসপাতলের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন জানান, প্রতিদিন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তাদের রোগীর ড্রেসিং করতে হয়। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারের সহকারীদের টাকা না দিলে রোগীদের ফেলে রাখে। আর পরে আসা রোগীরা টকা দিলে তাদেরটা আগে করে দেয়। তাই তিনি বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে ঘুষ দিয়ে ড্রেসিং করান। 
হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী খোলা কাগজকে বলেন, বেশির ভাগ অভিযোগ ঠিক নয়। তবে অনেকেই হাসপাতালের সব কিছু জানেন না। এ কারণে তারা একশ্রেণির দালালের হাতে প্রতারিত হচ্ছেন। কিছুদিন পরপরই হাসপাতালের দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। 

জনবল ও শয্যা সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫০০ বেডের হাসপাতাল সরকারি আদেশে ৯০০ বেডে উন্নিত করা হয়। কিন্তু জনবল ও অবকাঠামো ৫০০ বেডেরই রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘হসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ থেকে ১৬০০ রোগী ভর্তি থাকে। এদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  এম এ জি ওসমানী মেডিকেল   টাকা ছাড়া মিলে না শয্যা   পদে পদে ভোগান্তি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

রেন্টিগাছ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
আদিতমারীতে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ
২০ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখায় আবরার ফাহাদের মায়ের সন্তুষ্টি প্রকাশ
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় এনজিও কর্মকর্তা নিহত
শ্রীমঙ্গলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে সনাকের মানববন্ধন

সর্বাধিক পঠিত

মসজিদের চাঁদা উত্তোলনে দু'পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
মরণঘাতী ক্যানসার থেকে বাঁচতে চায় ভূঞাপুরের মঞ্জু
নালিতাবাড়ীতে গাড়িচাপায় ৫ শ্রমিক আহত
৮ বছর বেতন-ভাতা পান না সহকারী লাইব্রেরিয়ান
নালিতাবাড়ীতে ৬০ বোতল ভারতীয় মদসহ আটক ১
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close