নওগাঁর পোরশায় পতিত আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বুলবুলের রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী লাইব্রেরিয়ান জোহুরুল ইসলাম। সহকারী এই লাইব্রেরিয়ানের সব শিক্ষা সনদ অবৈধ দাবি করে ৮ বছর ধরে বেতন-ভাতা আটকিয়ে রেখেছেন প্রভাবশালী ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রধান শিক্ষক।
এমনকি তাকে গত ৮ বছর ধরে বিদ্যালয়ের বারান্দায় পর্যন্ত উঠতে দেননি ওই আওয়ামী প্রধান শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আমদা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বুলবুল পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। উপজেলার নিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় পোড়ানোর মামলায় তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী লাইব্রেরিয়ান একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার, এমনকি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে তাদের থেকে লিখিত প্রতিকার পেলেও খুঁটির জোরে দীর্ঘ ৮ বছর বেতন-ভাতা ও বিদ্যালয় থেকে দূরে রাখেন আওয়ামীপন্থি প্রধান শিক্ষক।
এসব দপ্তর একাধিকবার লাইব্রেরিয়ানের চাকরি পুনর্বহাল করে বেতন-ভাতা চালু করার নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষককে। কিন্তু আওয়ামী খুঁটির জোরে সব নির্দেশকে অমান্য করে এসেছেন তিনি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক জোহুরুল ইসলাম।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি সহকারী গ্রন্থাগারিক জোহুরুল ইসলামকে স্থায়ী বরখাস্ত করে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক। নোটিশ পেয়ে জোহুরুল ইসলাম চাকরি ফেরত পেতে একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর পর্যন্ত ঘুরতে থাকেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ। অনেক টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছিলাম। ৮ বছর ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাই না। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিন পার করছি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কারাগারে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আরিফ আদনান জানান, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে সহকারী লাইব্রেরিয়ান জোহুরুল ইসলামকে তার চাকরি ফেরত দিয়ে বেতন-ভাতা চালু করার। জোহুরুল ইসলামকে চাকরি থেকে দূরে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রধান শিক্ষক যেটা করেছে, সেটা ব্যক্তিগত কোনো আক্রমণ থেকে করেছে বলে মনে করছেন তিনি।
কেকে/এএস