ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরুর তাগিদ বিএনপির

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরুর তাগিদ বিএনপির

দ্রুততম সময়ের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরু এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো বহাল থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগীদের বিদায় করার তাগিদ দিয়েছে বিএনপি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছে দলটি। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক প্রায় তিন ঘন্টা চলে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সক্রিয় প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক মাসের কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ বিষয়ে প্রায় সবাই তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারে আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় বিএনপির কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একজন নেতা বলেন, আলী ইমাম মজুমদারও ফ্যাসিবাদের পক্ষের লোক। এটা নিয়ে বিএনপি শিগগিরই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে এবং সরকারের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরবে। একই সঙ্গে তার ব্যাপারে বিএনপি সোচ্চারও হবে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের পিএসের ব্যাপারেও বিএনপির পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক মন্ত্রীর পিএস ছিলেন। তিনি ফ্যাসিবাদের পক্ষের লোক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সেই একই ব্যক্তি এখন আবার কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার পিএস হলেন। ওই পদ থেকে তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

অন্তর্বর্তী সরকার গত এক মাসে ডিসি (জেলা প্রশাসক) এবং সচিব পর্যায়ে প্রশাসনিক যে রদবদল করেছে, সেটাতে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, এই রদবদল সর্বত্র নিরপেক্ষ হয়নি। এখানে অনেকেই আছেন যাদের স্বৈরাচারের সহায়ক শক্তি অথবা দোসর হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তাছাড়া এই প্রশাসনিক রদবদল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার আলোচনাও করেনি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেটি তাদের মূল কাজ। কারণ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরে দলীয়করণের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। সেই সংস্কার কার্যক্রম এখনো শুরু করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি চায়, দ্রুততম সময়ে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করুক এবং এ ব্যাপারে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা আরম্ভ করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৈঠকে একজন নেতা বলেন, ছাত্র সমন্বয়করা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিএনপির নেতাদের

তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখছে। অথচ বিএনপি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ১৬ বছর ধরে নির্যাতিত এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। দীর্ঘ সময় ধরে দলটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল। দল ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী নিহতও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়কদের যথাযথ গাইডলাইন প্রয়োজন। দুজন সমন্বয়ক অন্তর্বর্তী সরকারেরও অংশ। সুতরাং এ ব্যাপারে তাদের রোল থাকা দরকার।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লড়াই করা বিএনপির নেতাদের নিয়ে এ ধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য জনগণ মেনে নেবে না। ছাত্র সমন্বয়করা এ ধরনের বক্তব্য দিতে থাকলে মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের ভুল বার্তা যাবে। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হবে। তখন একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বৈঠকে ঢাকার বাইরে সফরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে গত রোববার জেলা প্রশাসকদের কাছে যে চিঠি দেওয়া হয়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একজন নেতা বলেন, বিএনপির প্রশ্ন হচ্ছে—কোন প্রটোকলে, কোন বিবেচনায় তাদের এই নিরাপত্তা দেওয়া হবে? কারণ, তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কেউ নন, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কোনো পদেও নেই।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা জামায়াত আমিরের ওই ঘোষণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এটা জনগণের চাওয়া বা মতামতের প্রতিফলন নয়। কারণ ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যাসহ গত ১৬ বছরের অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুনের জন্য জনগণ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার চায়।

বৈঠকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে এরই মধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি।

এ ছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরালো করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপির এক নেতা। বৈঠকে বিএনপির হাইকমান্ডকে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরুর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে, সেখানে দ্রুত নতুন কমিটি দেওয়া দরকার। এর ফলে সংগঠন গতিশীল হবে।

 

 
Electronic Paper