ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২০ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফ্যাসিবাদ চরিত্র বাদ দিয়ে আ.লীগকে ভোটে চান ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৯:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৩, ২০২৪

ফ্যাসিবাদ চরিত্র বাদ দিয়ে আ.লীগকে ভোটে চান ফখরুল

আওয়ামী লীগকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া বা ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা উচিত নয় -বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গত ১ অক্টোবর একটি বার্তা সংস্থকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন।

রাজনৈতিক পটভূমিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দলটি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে এবং জনবিরোধী কার্যকলাপের কারণে জনসাধারণ ও তরুণ প্রজন্ম থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সাক্ষাৎকারে তিনি এক-এগারোর মতো একটি সম্ভাব্য বিরাজনীতিকরণের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক দলগুলিকে সতর্ক থাকতে এবং দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এসময় ফখরুল বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই, তাহলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হবে কেন? আওয়ামী লীগের মতো পুরনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া উচিত।’

ফখরুলের এ অবস্থানের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধের সংস্কৃতি অনুপস্থিত। হিংসাত্বক রাজনীতি গোটা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ক্ষমতায় গিয়ে কোন দল কত দমনমূলক হতে পারে তার প্রতিযোগিতাই চলে। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধ ধরা পড়েছে। দেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য ফখরুলের এ বক্তব্যকে বিএনপিরই রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে দেখছেন, এবং এর প্রসংশা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্যকে অন্তর্ভুক্তিমুলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বিএনপির এ সমর্থন প্রসংশাযোগ ঘটনা হিসেবেই দেখছেন তারা। এ নিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে গতকাল বৃহস্পতিবার। তাতে বলা হয়েছে, দেশের রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও প্রতিহিংসার গভীর থেকে গভীর হয়ে উঠেছে। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য এটা স্বাস্থ্যকর নয়। আওয়ামী লীগ তার ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপিসহ অপরাপর বিরোধী শক্তির কণ্ঠরোধ করে গেছে, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে গেছে। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিএনপি মূলত হিংসাত্বক রাজনীতির ঐতিহ্যকে বিদায় জানাতে চাইছে। বিএনপি এর মধ্য দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমঝোতার বার্তা দিতে চেয়েছে রাজনীতিতে।
তবে এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র। কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা জানান, মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্য দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ভুল বার্তা দিতে পারে। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের এখনো দুই মাস হয়নি। গণহত্যার ঘটনা এখনো দগদগে। সর্বত্র ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি উঠছে, শেখ হাসিনার বিচারের কথা উঠছে। সেখানে আওয়ামী লীগকে গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার আলোচনা আগ বাড়িয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট ডেকে আনার সামিল।

তবে বিএনপির কর্মীদের অনেকে বলছেন, মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের বার্তা আছে, নাকি রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের কর্মীরা। আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীণ দল এবং তাদের বৃহৎ সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে দেশে। তাদের চাইলেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যাবে না। তারা সমাজে থাকবে। দলটাও থাকবে। তাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কিভাবে সম্পৃক্ত করা হবে, সে কৌশল ঠিক করাটা অধিকতর প্রজ্ঞাপূর্ণ রাজনীতি হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

এদিকে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণ ও গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এনেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। ফখরুলে যেদিন ইউএনবিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেদিনই ফরহাদ মজহার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এক লেখায় বলেছেন, “অনেকে রাজনৈতিক দল হিশাবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে চাইছেন। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার উদাহরণ বাংলাদেশে রয়েছে, অতএব আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করবার পক্ষে বিস্তর যুক্তি দেওয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট দল হিসাবে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করবার পক্ষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি রয়েছে। আইন ও রাজনীতি উভয় দিক থেকে সেই সকল যুক্তি আমাদের বিবেচনা করা দরকার। সেই ক্ষেত্রে ইউরোপে ফ্যাসিস্ট দলগুলো নিষিদ্ধ করবার উদাহরণ এবং ইউরোপের অভিজ্ঞতার আলোকে যেমন বিষয়টি আমাদের বিশ্লেষণ করা উচিত, তেমনি স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের ভূমিকা আমাদের অবশ্যই কঠোরভাবে বিচার করে দেখতে হবে। তবে মনে রাখা দরকার আওয়ামী লীগ একাই শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেকুলার ও ধর্মীয় নানান ফ্যাসিস্ট প্রবণতা রয়েছে। এদের মোকাবিলা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।”

কেন ফ্যাসিস্ট দল হিশাবে অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত এ ব্যাপারে তিনটি ১. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন; ২. রাজনৈতিক সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন; ৩. রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর ফ্যাসিস্ট শক্তির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং সাংবিধানিকভাবে একজন ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা; ৪. জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যকে উসকে দেওয়া; ৫. আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন -এরকম পাঁচটি যুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন।

খোলা কাগজ/এজে

 
Electronic Paper