ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
🕐 ৪:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর পালপাড়া গ্রামে প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান সময়ে কুমারপাড়ার নারী-পুরুষেরা আগের মত আর ব্যস্ত সময় পার করেন না। অথচ কয়েক বছর পূর্বে এই গ্রামের নিপুণ কারিগদের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো মাটির তৈজসপত্র। রান্নার কাজে হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, খাবারের সানকি, মটকি, সরা ইত্যাদি। তবে আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়ে অর্থসংকট ও মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে এ পুরনো শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

সরেজমিনে উপজেলার একমাত্র কুমারপাড়া হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ হাটশহর পালপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাটির তৈরি আসবাবপত্র তৈরির কাজে নিয়োজিত গুটিকয়েক মৃৎশিল্পীদের সবাই কুমার সম্প্রদায়ের। একসময় এই পাড়া মৃৎশিল্পের জন্য খুবই খ্যাতি অর্জন করলেও মাটির জিনিসপত্রের প্রতি প্রতিনিয়ত মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় অনেক পুরনো শিল্পীরাও পেশা বদল করছেন। আর অনেকেই বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই চান না তাদের সন্তানরা এ পেশায় আসুক। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে যেন ভালো চাকরি করতে পারে। অনিশ্চিত জীবনের দিকে সন্তানদের দিতে চান না তারা।

বর্তমানে বাজারে মৃৎশিল্পের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাষ্টিক, দস্তা ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এই গ্রামের এখনো প্রায় ৪০টি কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য।

তাদের একজন মনোরঞ্জন পাল। তিনি বলেন, ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে মাটির এসব জিনিসপত্র বানানো শিখেছি। এক সময় এগুলোর অনেক চাহিদা ছিল। এখন চাহিদা নেই বললেই চলে। মাটির বিভিন্ন জিনিস বানাতে অনেক খরচ হয়। এজন্য সরকার থেকে মাসিক ভাতা ও সহজ শর্তে ঋণ দিলে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারতাম।

বিজয় রুদ্রপাল বলেন, বাপ-দাদার এই পেশা টিকিয়ে রাখতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বগতি। সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারবো। আর না-হলে এই পেশা ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

কানুন বালা বলেন, এখন বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। আগেকার দিনে আমরা বিভিন্ন পুকুর থেকে মাটি সংগ্রহ করে কাজ করেছি। আর এখন মাটি, বালু কিনতে হয় এছাড়াও রঙের দাম বেশি। একারণে খুব একটা লাভ হয়না। সরকারিভাবে আমাদের তেমন সহযোগিতাও করে না। আমাদেরকে সহযোগিতা করলে আমরা এ পেশাকে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে পারবো।

 
Electronic Paper