সোনাইমুড়ীতে সংস্কারবিহীন সড়ক খালে পরিণত, সাঁকোই ভরসা গ্রামবাসীর
সৈয়দ মো. শহিদুল ইসলাম
🕐 ৫:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
সোনাইমুড়ী উপজেলার ১নং জয়াগ ইউনিয়নের আনন্দীপুর কোনাপাড়া গ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন গত সরকারের পনের বছরেও দৃশ্যমান হয়নি বলে জানান এলাকাবাসী। এ ইউনিয়নের গ্রামগুলোর মধ্যে আনন্দীপুর কোনাপাড়া, জুনুতপুর, আমকিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অভ্যন্তরে প্রায় ১০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কটির এখন জীর্ণদশা। দীর্ঘ পনের বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার প্রায় লক্ষাদিক পরিবার। প্রতিদিন এই সড়কে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম আনন্দীপুর কোনাপাড়া সড়কটি। এ সড়কটির দু’পাশে খাল আর পুকুর থাকায়, পাড় ভেঙে সড়কটি খাল আর পুকুরে বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের লোকজনের চলাচলের পথটিই বর্তমানে বন্যায় অচল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসীর সূত্রে জানা যায়, আনন্দীপুর কোনাপাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাপাড়া সড়কটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না করায় প্রায় ১০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে সড়কের নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের কারণে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়কের অংশ। সড়কের প্রায় একশো মিটার দূরত্বের অংশ পুকুরে বিলীন হলে হাঁটু ও মাজা পানিতে চলাচল করতে হয় লোকজনদের। এবারের ভয়াবহ বন্যায় যে কয়জন মানুষ এই এলাকার বাহিরে মারা গিয়েছে, রাস্তার কারণে লাশ এলাকায় আনতে পারেনি এবং মাটি দিতে পারেনি নিজ এলাকায়। শিশু-কিশোরদের স্কুল-মাদরাসায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা স্থানীয় আনন্দিপুর প্রাইমারি স্কুল, আনন্দীপুর তালিমুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসা, আনন্দীপুর মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা, জুনদপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, আমকি মহিলা আলিম মাদ্রাসা, জুনতপুর ইফতেদায়ী সুলতানিয়া মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে যাতায়ত করে থাকে।
স্থানীয় জনগণ জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরসহ জনপ্রতিনিধির কাছে বারবার ধর্ণা দিলেও বাজেট নাই বলে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ করেছেন, আবার টেন্ডারও যা ১৫ বছরে একবার হয়েছিল সেটা মোটা অংকের টাকা ঘুষ না দেওয়ার কারণে রাস্তাটির টেন্ডার বাতিল করেছেন উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তারা। ফলে এভাবেই পড়ে আছে সংস্কার না হওয়া রাস্তাটি। এবারে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায়, লাখ টাকা ব্যায় করে এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাস্তাটিতে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রায় কয়েক কিলোমিটার সড়কের উপর স্থাপিত হয় বাঁশের সাঁকো।
স্থানীয় এক মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ, মাওলানা, ইসমাইলসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি জানান, প্রতিবছর একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তাটির অবস্থা খুব বিপদজনক হয়ে পড়ে। এবার বন্যায় আরো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাস্তাটির। তাই মেরামত করার জন্য আমরা এলাকাবাসী সবার সহযোগিতায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করার ব্যবস্থা নিয়েছি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধিরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চায় এলাকায়। যতবার ভোট চাইতে আসছে ততবার বলেছে রাস্তা বেঁধে দিবে এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন করবে। কিন্তু নির্বাচনের পর তারা যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সড়কটি সংস্কারে বারবার ধর্ণা দিলেও সন্তোষজনক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই খুব দ্রুত সময়ে সড়কটি রক্ষায় ও সংস্কারে এগিয়ে আসার জন্য বর্তমান সরকারের সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
এবিষয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেন, ১নং জয়াগ গ্রামের আনন্দীপুর কোনাপাড়া সড়কটি ছাড়াও আরও কয়েকটি সড়কের অবস্থা বেহাল। এ মুহূর্তে বরাদ্দ না থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নোয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আযাহারুল ইসলাম খোলাকাগজকে জানান, এই মুহূর্তে কোনো বাজেট নাই। বাজেট আসলে চেষ্টা করব রাস্তাটি সংস্কার করার।