ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২০ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষে যুবকের সফলতা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
🕐 ৩:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৩, ২০২৪

মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষে যুবকের সফলতা

ছোট গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা অশোক কুমার সরকার। মৃত কৃষক অমল চন্দ্র সরকারের তিন ছেলে-মেয়ে। ছেলে অশোক সবার বড়। অশোকের বাবা মারা যান ২০০১ সালে। এরপর থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় অশোককে।

পৈত্রিক সূত্রে অশোক তিন বিঘা জমি পান। ছোট বেলা থেকেই তার কৃষি কাজে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে তখন থেকেই বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন তিনি। আয়ের টাকা দিয়ে নিজের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ বহন করতেন। এছাড়াও তিনি দুই বোনরে মধ্যে বড় বোনকে এই আয়ের টাকা থেকেই বিয়ে দিয়েছেন। ছোট বোন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তার পড়াশুনার খরচও তিনি বহন করেন। ২০২৩ সালে তিনি নিজেও বিয়ে করেছেন। ছোট গয়েশপুর গ্রামটি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত।

অশোক কুমার সরকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স, মাষ্টার্স শেষ করেছেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও চাকুরির পিছনে ছুটেননি তিনি। বাবার কাজকেই ভালোবেসেছেন। তাই কৃষি কাজে দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করেন। সারা বছরে কয়েক লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম এনে দিয়েছে অশোকের সাফল্য। এই সাফল্য আজ কৃষিক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। পৈত্রিক তিন বিঘা জমিতে চাষ করে যা আয় হতো তার কিছু অংশ টাকা জমিয়ে রাখতেন। জমানো টাকা দিয়েই আবার দুই বিঘা জমি ভাড়া নেন। অশোক এখন পাঁচ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি বছর তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে ‘বিজলী ২০২০’ জাতের মরিচ চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন জমিতে। তিনি স্বল্প সময়ে খাদ্যগুন সমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের মরিচ চাষে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন।

শুধু মরিচ নয়, তিনি অভিনব পদ্ধিতে পুইশাক, পটল, করলা, লাউ, ফুলকপি, বাধাকপি ও বেগুন চাষ করেন। এক জমিতেই পর্যায়ক্রমে কয়েক প্রকার ফসল ফলান তিনি। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি অতি দ্রুততার সঙ্গে উচ্চমানের ফলন পান। সারা বছর কাঁচা মরিচ বিক্রি করেন। এ পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে ভালো দাম পেয়ে আসছেন। ধানের চেয়ে আয় বেশি। জুন মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে অদ্যাবধি মরিচ উঠাচ্ছেন তিনি। দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে ইতিমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন।

পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে কৃষক অশোক কুমার সরকার বলেন, সাধারণভাবে মরিচ চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না। নানা ভাবে গাছ নষ্ট হয়েছে যায়। তবে মালচিং পেপার ব্যবহারে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ পদ্ধিতিটি গাছকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অতিবৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। সারের অপচয় রোধ করে। আগাছা দমন করে এবং মাটির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলন ভালো পাওয়া যায়।

এই পদ্ধতিতে প্রথমে ১০ শতক জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পান। বর্তমানে তিনি সারা বছর এ পদ্ধিতে মরিচ চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকার মালচিং পেপার লেগেছে। সব মিলে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমি থেকে অন্তত ১২০ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে লাউ, ২০ শতকে পটল, ৩৩ শতকে বেগুন ও নতুন ১৪ শতক জমিতে মরিচের চারা রোপন করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিউল আলম বলেন, মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এটি গাছের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং ফলন বাড়ায়। ফলে কৃষক লাভবান হয়।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম বলেন, পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে সবজি চাষে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এ বছর জেলায় ৫’শ ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে মালচিং পদ্ধিতে জেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে সম্ভাব্য কাঁচা মরিচ উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৭ হাজার ১৬৮ মেট্রিকটন ধরা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাজারে মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার অনেক খুশি। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ওই সফলতা কৃষিক্ষেত্রে নতুন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কৃষক অশোক কুমারের সাফল্য অন্যান্য কৃষকদেরও প্রেরণা দিচ্ছে। এ পদ্ধতি পুরো জেলার কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে কাঁচা মরিচ উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব। গাইবান্ধায় বর্তমানে যে কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয়, তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

খোলা কাগজ/এজে

 
Electronic Paper