ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভিন্ন ধর্ম হলেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির অটুট

একপাশে আজান, অন্য পাশে উলু ও শঙ্খধ্বনি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
🕐 ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০২৪

একপাশে আজান, অন্য পাশে উলু ও শঙ্খধ্বনি

কুষ্টিয়া শহরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদে নূরের পাশেই নব-রজনী সংঘ সার্বজনীন পূজা মন্দিরের অবস্থান। মুসলিমরা নামাজ পড়েন মসজিদে। আর হিন্দুরা যান মন্দিরে। ধর্ম ভিন্ন হলেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন দীর্ঘ দিনের। একপাশে আজান, অপর পাশে উলু ও শঙ্খধ্বনি।

একইসঙ্গে একে-অপরকে সহযোগিতা করে আসছেন। এটিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বলছেন সবাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের বাবার আলী গেট থেকে পশ্চিম পাশে থানাপাড়া সংলগ্ন রেল লাইনের সাথে লাগোয়া ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয় নব-রজনী সংঘ সার্বজনীন পূজা মন্দির। এর পাশেই ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয় মসজিদে নূর। এই দুই উপাসনালয়ের প্রবেশপথ একই। মাঝখানে শুধু একটি বাড়ি। একপাশে আজান, অপর পাশে উলু ও শঙ্খধ্বনি। বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসলেও কখনও দুই ধর্মাবলম্বী মানুষের এ নিয়ে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।

রবিবার দুপুর সোয়া একটায় গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি মসজিদ-মন্দিরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যেই চলছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। তিনতলা ভবনের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে জোহরের আজান। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর দেড়টা। ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা নামাজ আদায়ের জন্য একে একে মসজিদে প্রবেশ করছে।

ঠিক তার পাশেই মন্দির। মন্দিরে এখন চলছে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার শেষ দিকের প্রস্তুতি। সে সময় আজানের সময় নীরবতা বজায় রাখেন পূজারি ও ভক্তরা।

মন্দিরে পূজারি সমিত্রা দাস জানান, ‘মন্দিরের পাশের মসজিদে আজান পড়লে, আমরা বিরতি দেই। এরপর আবার শুরু হয় পূজা-অর্চনা। দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিরোধ দূরে থাক, স্থানীয় মুসলিম নর-নারীরা প্রতিবেশী সনাতন ধর্মালম্বীদের পূজা উদযাপনে সহায়তা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী জানান, ‘আমাদের গায়ে গায়ে মন্দির-মসজিদ। এখানে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ নেই। সবাই মিলেমিশে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালন করছে। একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে। ধর্ম নিয়ে এখানে কোনো বাড়াবাড়ি নেই।’

আরো এক বাসিন্দা বলেন, ‘৫ আগষ্টের পর আমরা নিজেরা এই মন্দির পাহারা দিয়েছি। আজ পর্যন্ত এখানে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নিয়ে কোন ঘটনা ঘটেনি।’

নব-রজনী সংঘের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ কুমার দাস জানান, ‘প্রত্যেকটি ধর্ম শান্তির কথা বলে। সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমরা আমাদের মন্দিরে পালন করে থাকি। আমরা আমাদের পূজা করছি, আর মুসলিমরা তাদের ধর্ম পালন করছে। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। স্থানীয়রা আমাদেরকে উপদেশ দেন, সহযোগিতা করেন। ’

মসজিদের ইমাম মুফতি সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘মুসলিম হিসেবে আমরা মসজিদে ইবাদত করি। মসজিদের পাশে মন্দির হওয়ায় সেখানে তারা তাদের ধর্মীয় বিধান পালন করেন। আমরা সকলেই বাংলাদেশী। প্রতিবেশী হিসেবে একে অপরের প্রতি আন্তরিক। আমরা যখন নামাজ আদায় করি তখন তারা আওয়াজ, গান-বাজনা বন্ধ রাখে। আবার আমাদের নামাজ আদায় হয়ে গেলে তখন তারা তাদের রীতিনীতি পূর্ণ করে। এক যুগে কারো সাথে কারোর কোন বৈরি সম্পর্ক তৈরি হয়নি।’

মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এ্যাড. আবুল হাশেম বলেন, ‘মসজিদের সম্পত্তি কেনা ১৯৮৬ সালে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘ দিন ধরে এখানে বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরে একসাথে বসবাস করছি। আজ পর্যন্ত কোন ঝুট-ঝামেলা হয়নি।’

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি চাকী জানান, ‘কুষ্টিয়া একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। এখানে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বন্ধন দীর্ঘ দিনের।’

কেকে/এজে

 
Electronic Paper