ঢাকা, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১ কার্তিক ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নোয়াখালীতে বন্যায় এখনো পানিবন্দি ১২ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২৪

নোয়াখালীতে বন্যায় এখনো পানিবন্দি ১২ লাখ মানুষ

এ বছরের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে। বন্যার পানির জলবদ্ধতায় এখনো পানিবন্দি প্রায় ১২ লাখ মানুষ। বন্যা পরবর্তী সময় দীর্ঘ হচ্ছে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি। আর এর জন্য খাল দখল, খালের ওপর বহুতল ভবন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণকে দাবি করে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আজ বুধবার সরজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও পানি রয়েছে বাড়ির উঠোনে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও এর চেয়ে বেশি পানি রয়েছে।

জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ফেনী থেকে নেমে আসা পানি উজানের পানি প্রবেশ করায় নোয়াখালীর আটটি উপজেলা প্লাবিত হয়। এরই মধ্যে টানা ভারি বৃষ্টিতে প্রতিটি বাড়ির উঠান ও সড়ক ৪/৫ ফুট পানির নিচে প্লাবিত হয়। নিজেদের বসত ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বহুতল ভবনের বাসা ও পাশ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন বন্যা কবলিত লোকজন। এখনও অনেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রয়েছেন।

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল জেলার সদর, কবিরহাট, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলা। কিন্তু বন্যার দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পানি বন্দি হয়ে আছে চৌমুহনী পৌরসভার বেশিরভাগ ওয়ার্ড। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও বেশির ভাগ বাড়ির উঠোনো হাঁটু পরিমান পানি রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক জানান, প্রায় ২মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান। কয়েকদিন আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাওয়ার কারনে আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে তাদের চলে আসতে হয়। এরপর থেকে চৌমুহনী বাজারের ছোট একটি বাসায় তারা ভাড়া নিয়েছেন। এখনও পরিবারের সবাই ওই বাসায় আছে। কবে নাগাদ পানি নামবে, আর কবে বাড়ি আসতে পারবেন তা নিশ্চিত নয় তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু চৌমুহনী পৌরসভা নয় একই চিত্র জেলার সদর উপজেলার নেয়াজপুর, চরমটুয়া, কাদির হানিফ ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর, সুন্দলপুর ইউনিয়ন, সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া, কেশারপাড়, ডমুরুয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের। এছাড়াও বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। আর এই জলাবদ্ধতা দীর্ঘ হওয়ায় বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ।

স্থানীয়রা বলছেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুর হয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে। তাই, নোয়াখালীর জলাবদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে লক্ষীপুর জেলার খালের উপর সকল বাঁধ, অবৈধ স্থাপনা, ভেসাল জালসহ পানি নামার জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো সরানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করা দরকার।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী সোহান বলেন, বাজারের প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি সবকয়টি এলাকা অনেক নিচু। বন্যার পর কয়েক বার পানি নেমেছিলো, আবার বৃষ্টিতে পানি জমতে থাকে। একদিন বৃষ্টি হলে ৩/৪দিন পানি জমে থাকে। চৌমুহনী বাজারের বড় খালগুলোতে ময়লা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। আশপাশের সবগুলো ছোট খাল দখল করে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ও বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে প্রতিটি জায়গায় পানি আটকে আছে।

জেলা শহর মাইজদীর মিলন নামের এক বাসিন্দা বলেন, শহরে জলাবদ্ধতার কারণ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তাঁর মতে শহরে যেভাবে ড্রেন করার কথা ছিলো সেটি সেভাবে না করে ড্রেনের জায়গায় কোনভাবে নালা করা হয়েছে। ফলে এ স্বল্প জায়গা দিয়ে পানি নামছে না, তার উপর ড্রেনে ময়লা ফেলে পানির গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আজ প্রায় ৩মাসের বেশি সময় ধরে শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। কবে এসব থেকে মানুষ মুক্তি পাবে এটি কারও জানা নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগের কাগজে-কলমে অনেক খালের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তা নেই। কয়েক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা খালগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন, নিজেরাও দখলে নিয়েছেন অনেকাংশ।

জেলা প্রশাসকের সবশেষ তথ্যমতে (বুধবারের আপডেট), জেলায় বন্যা এখনও পানি বন্দি ১১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। খোলা রয়েছে ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র, যেখানে এখনও রয়েছেন প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ।

জেলা প্রশাসক খন্দতার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বন্যা পরবর্তী সময় বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় খালের ওপর থাকা কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি প্রবাহ সচল করতে খাল পরিষ্কারের কাজও করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খাল দখল করে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো ভেঙে দেওয়াসহ খাল পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রয়েছে।

কেকে/এজে

 
Electronic Paper