ঢাকা, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১ কার্তিক ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মুজিব কিল্লা দুর্নীতি

কাফির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৬:৫২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২৪

কাফির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া মুজিব কিল্লা প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহেল কাফির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া অভিযোগে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে বিলাসবহুল বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট, ব্যক্তিগত গাড়ি, চারটি ইটভাটা, সাতটি ডাম্প ট্রাক, দুগ্ধ ও মৎস্য খামার গড়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদিপশু রক্ষায় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি ‘মুজিব কিল্লা’ বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। ওই প্রকল্পে সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহেল কাফি।

অভিযোগে বলা হয়, সরকারী চাকরীজীবি হলেও চাকরীবিধি লঙ্ঘন করে নিজ দপ্তরে নিজের সুপারভিশনে স্ত্রী কাসফিয়া তামান্নার নামে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কার্যাদেশ নেন আবদুল্লাহেল কাফি। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেন। সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়ার পর তার ও পরিবারের সদস্যদের ভাগ্য পাল্টিয়ে ফেলেন। তিনি সেখানে টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীদের অনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী কাসফিয়া তামান্নার নামে মেসার্স কাসিবা কনস্ট্রাকশন নামে লাইসেন্স তৈরি করেন কাফি। আর ওই প্রতিষ্ঠানের নামে সাইক্লোন শেল্টার প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ কাজ হাতিয়ে নেন।

উল্লেখ্য, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামালকে গত ১৮ আগস্ট রাতে রাজধানীর মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগের দিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ১ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় কালামারছড়া উচ্চ বিদ্যালয় বহুমুখী ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নির্মাণ প্রকল্প ও কয়রা উপজেলার অন্য একটি কাজ তার স্ত্রী কাসফিয়া তামান্নার মালিকানাধীন কাসিবা কনস্ট্রাকশনের নামে নিয়ে তদারকি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন আবদুল্লাহেল কাফি।

এছাড়া নামে-বেনামে বিপুল সংখ্যক প্রকল্পের কাজ হাতিয়ে নেন মুজিব কিল্লা প্রকল্পের এই সহকারী প্রকল্প পরিচালক। এভাবে অবৈধভাবে অর্জিত টাকায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়েন।

অভিযোগে বলা হয়, আবদুল্লাহেল কাফির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে ২০২১ সালে মুজিব কিল্লা প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। সেসময় তাকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদায়ন করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মুজিব কিল্লা প্রকল্পে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২২ জনকে নিয়োগ দেন কাফি। এর মধ্যে তার ছোট ভগ্নিপতির ভাগ্নে রাউফন আজাদকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে, তার মামাতো ভাই মো. আতিকুর রহমানকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী, বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তার ক্লাসমেট মো. টিপু সুলতানকে নোয়াখালী জেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী, কাফির আরেক ক্লাসমেট মো. রবিউল ইসলামকে ঝালকাঠি জেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী, অন্য সহকারী প্রকৌশলী বাকী বিল্লার শ্যালক মো. সাজ্জাদ নূরকে জামালপুর জেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী, দ্বিতীয় স্ত্রী কাসফিয়া তামান্নার বান্ধবী আতিয়া আক্তারকে ডেন্টাল টেকনিশিয়ান হওয়া স্বত্তেও অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর এভাবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ অর্জন করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও দুদকে জমা পড়া অভিযোগে মুজিব কিল্লা প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহেল কাফির ঢাকা ও বগুড়ার বিভিন্ন জায়গায় তার ও পরিবারের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়।

সেগুলোর মধ্যে- উত্তরা মডেল টাউনের ১২ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে দুই কোটি টাকা দামের আলিশান ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটিতে ৩টি ফ্ল্যাট, বসিলা র‌্যাব ক্যাম্পের পিছনে ২টি ফ্ল্যাট, বগুড়া উপশহরে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহুতলবিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে ৪টি ইটের ভাটা, ৭টি ড্রাম ট্রাক, ৪টি মাটি কাটার ভেকু মেশিন, বগুড়ার গাবতলীর মহেশপুর ইউনিয়নে দুগ্ধ খামার ও কয়েকটি ফিশারি ফার্ম। এছাড়া নিজের ও স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্রসহ বিপুল অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স। স্কুলছাত্রী মেয়ের যাতায়াতের জন্য রয়েছে ৩০ লাখ টাকা দামের নোয়া গাড়িও।

এছাড়া চাকরিকালে কাফি তার স্ত্রী ও নিজ নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সকল দুর্নীতির অর্থ জমা করেন এবং তার ও স্ত্রী নামে সঞ্চয়পত্রসহ ব্যাপক ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল্লাহেল কাফি বলেন, ‘যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দীর্ঘদিন ধরে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তাছাড়া আমার সম্পদের হিসেব তো সরকারকে দিতেই হবে। যদি অবৈধ কোনো সম্পদ পায়; তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিবে।’

 
Electronic Paper