ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আটা খেয়ে দিন যাচ্ছে আনোয়ারা-জাহিদুল দম্পতির

সুজন মাহমুদ, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম)
🕐 ৪:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৪

আটা খেয়ে দিন যাচ্ছে আনোয়ারা-জাহিদুল দম্পতির

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের ধোনার চর মাঠ পাড়া এলাকার আনোয়ারা বেগম (৬৫) ও জাহিদুল ইসলাম (৮০) দম্পতি। থাকেন টিন ও পাঠ খড়ির বেড়া দেওয়া একটি ঘরে। পাঠ খড়ির বেড়ার অনেকাংশেই ভাঙাচোরা। ঘরের এপাশ থেকে কুকুর-বিড়াল ঢুকে বের হয়ে যায় অন্য পাশ দিয়ে। ঘরের ভিতরটা বেশ জরাজীর্ণ। দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে দুইজন মানুষের বসবাস। বাড়ির টয়লেটটিও রয়েছে অস্বাস্থ্যকর। এসময়ে সরকারি দেওয়া পাকা টয়লেট থাকার কথা তাদের, কিন্তু সেটিও নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই এ দম্পতির বসবাস। শুধু তাই নয় মাসের প্রায় সময় ভাত না পেয়ে খান রুটি।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন পরিবেশে থাকেন এ দম্পতি। খোলা কাগজের সঙ্গে কথা হয় আনোয়ারা-জাহিদুল দম্পতির। তারা খোলা কাগজকে জানান, আমরা গরীব মানুষ। টাকা পয়সা নাই। ছেলে ঢাকায় একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে পানি দেওয়ার কাজ করেন। বেতন পান ১২ হাজার টাকা। বাড়িতে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান। পাঁচ হাজারের মধ্যে চার হাজার টাকা একটি কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। বাকি এক হাজার টাকা দিয়ে কারেন্ট বিল ও ঔষধ কিনতে খরচ হয়ে যায়।

এ দম্পতি আরও জানান, মেয়ের জামাই জয়ের আলী নিজের ফলানো গম ভাঙিয়ে আটা করে দিয়ে যান সেগুলো রুটি বানিয়ে খেয়েই দিন যায় তাদের। ভাত না পেয়ে সব সময় রুটি আর খেতে পারেন না বলেও জানান এ দম্পতি।

গতকাল সরেজমিনে থাকা অবস্থায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের মতো গতকালও তারা স্থানীয় এক শিক্ষার্থীর দেওয়া শুকনো খাবার খেয়ে ছিলেন সারাদিন। শ্রাবণী ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী খোলা কাগজকে বলেন, আমি সোমবার এসে এ এলাকায় ২৫ প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছি। তাদেরও দিয়েছিলাম। আজ এসে শুনি তারা সেই শুকনো খাবার খেয়েই সারাদিন পার করছে।

প্রতিবেশী নূরভানু, আনোয়ারা ও বুলবুলি খাতুন বলেন, বুড়া-বুড়ি দুইজন মানুষ ঠিক মতো খাবার পায় না। একটা ছেলে সে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পাঠায় এর মধ্যে প্রায় সব টাকা কিস্তি দিয়েই শেষ হয়।

তারা অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান কোনো দিন আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। শুধু ওই নির্বাচন যখন আসে তখন এসে ভোট চেয়ে যায়। তাছাড়া তাদের দেখা আর পাওয়া যায় না।

তবে আনোয়ারা-জাহিদুল দম্পতির না খেয়ে থাকা এবং রুটি খেয়ে দিন পার করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন যাদুর চর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী। তিনি বলেন, কই আমরা তো গিয়েছিলাম তারা না খেয়ে নাই। তার বরাদ্দকৃত জিআর এর ১১ মেট্রিকটন চালের মধ্যে তাদের জন্য কি কোনো চাল ছিলো না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১১ মেট্রিকটন কে বলেছে। আমি বরাদ্দ পেয়েছি মোট ৮ টন। তিনি আরও জানান, আজকে ওই এলাকায় ২০ পরিবারকে চাল দেওয়া হবে।

এবিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসনান খান বলেন, তাদের নাম ঠিকানা পাঠান আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

কথা হয় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইদুল আরিফের সঙ্গে তিনি বলেন, তাদের কথা শুনে আমি ইতিমধ্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আমরা প্রতিমাসে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবো। এবং তাদের যে ঋণ রয়েছে সেটি পরিশোধ করবেন বলেও জানান এই জেলা প্রশাসক।

 
Electronic Paper