ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেষ রক্ষা হলো না রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসকের

খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড়!

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর
🕐 ৪:০৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৪

খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড়!

শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন ও সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানের। অবশেষে হত্যা মামলার আসামি হতে হলো তাদের। এর আগে, গত ২৬ আগস্ট খোলা কাগজের প্রথম পাতায় রংপুরের সিটি বাজারের সামনে গেল ১৯ জুলাই নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড চালানোর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সিটি বাজারের সামনে গোলাগুলিতে পুলিশকে উদ্বুদ্ধ করার নেপথ্যে নির্দেশদাতা হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের নাম উঠে আসে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে ২৬ আগস্ট তোলপাড় শুরু হয় রংপুর মহানগর তথা বিভাগ জুড়ে। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামসহ বার্তা পাঠানোর বিভিন্ন অ্যাপসে চালাচালি হতে থাকে খোলা কাগজের প্রতিবেদনটি। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে রংপুর সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে গুলিতে নিহত হওয়া আন্দোলনকারী মুসলিম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালী থানাকে নির্দেশ দিয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয় -বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গেল ১৯ জুলাই সিটি বাজারের সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ ছাত্র জনতার ওপরে নির্বিচারে গুলি চালানো হলে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্থানীয় গণেশপুর এলাকার বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিন মিলন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একইদিন রংপুর সিটি বাজার এলাকায় জেলা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় চারজন সাধারণ মানুষ মারা যায়। এসব ঘটনায় ইতিপূর্বে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন ও সদ্য বিদায়ী সাবেক জেলার প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, ঘটনার দিন ১৯ জুলাই সিটি বাজারে সামনে পুলিশ বেষ্টনীতে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন, অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম রশিদুল হক ও জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা। যখন শান্তিপূর্ণভাবে সাধারণ ছাত্র-জনতার মিছিলটি এগিয়ে আসছিল ঠিক তখনই -বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও জেলা প্রশাসক কঠোর অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয় অগ্রভাগে থাকা পুলিশ সদস্যদের। নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথেই এপিসিতে উঠে শর্ট গান নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় জেলা পুলিশ সুপার শাজাহানকে।

পরবর্তীতে এপিসি থেকে শটগান দিয়ে এসপি শাহজাহানের গুলি করার দৃশ্য ভাইরাল হলে গত ২৫ শে আগস্ট ফল ব্যবসায়ী মিরাজ হত্যা মামলায় আসামি করা হয় এসপি শাজাহানকে। কিন্তু সে মামলাতেও নেপথ্যের নির্দেশদাতা হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের নাম ছিল না। পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট খোলা কাগজে প্রথম পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাম উঠে আসে এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তার।

এ বিষয়ে মামলার বাদী দিলরুবা আক্তার জানান, আসামিদের যেন দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। বর্তমান সরকারের সময় তিনি ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন।

জানতে চাইলে মামলার আইনজীবী জানান, মিলন হত্যার নেপথ্যে যারাই ছিলেন শুধুমাত্র তাদেরকেই আসামি করা হয়েছে। আগামীতে বিচারে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস আছে তার।

উল্লেখ্য, গতকাল হওয়া মিলন হত্যা মামলাটিতে প্রধান আসামি বিভাগীয় কমিশনার এর পাশাপাশি রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিনসহ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং জেলা পুলিশের অপর কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 
Electronic Paper